বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার
ইতিহাস:
কাউখালী বালিকা
উচ্চ বিদ্যালয়: স্বপ্ন, সংগ্রাম ও সাফল্যের এক দীপ্ত ইতিহাস
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা কাউখালী উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কাউখালী বালিকা
উচ্চ বিদ্যালয়-এটি শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং নারী শিক্ষার জন্য একটি আলোকবর্তিকা,
সমাজ পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা এবং সম্মিলিত স্বপ্ন
বাস্তবায়নের জীবন্ত নিদর্শন। এই বিদ্যালয়ের প্রতিটি ইট যেন বহন করে ত্যাগ,
ভালোবাসা ও সংকল্পের গল্প।
স্বপ্নের সূচনা:
আশার প্রথম প্রদীপ
১৯৯৫ সালে শুরু হয় এই বিদ্যালয়ের
পথচলা-যখন নারী শিক্ষার আলোয় কাউখালীকে আলোকিত করার এক সাহসী স্বপ্ন দেখেছিলেন
স্থানীয় কিছু দূরদর্শী মানুষ। বাজার ফান্ডের মাধ্যমে ১.২৭ একর জমি টোকেন সালামীতে
বন্দোবস্ত নিয়ে শুরু হয় পথচলা, যেখানে একটি পরিত্যক্ত বাজার শেডকেই রূপ দেওয়া হয়
শ্রেণিকক্ষে। সরল কিন্তু সাহসী সেই পদক্ষেপই আজকের এই প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি।
প্রতিষ্ঠাতাদের
অসামান্য অবদান
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল
নায়ক ছিলেন তৎকালীন স্থানীয় সরকার পরিষদের সদস্য মরহুম রুহুল আমিন চেয়ারম্যান।
তাঁর অদম্য উৎসাহ, নিরলস প্রচেষ্টা এবং নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস ছিল
বিদ্যালয়টির বাস্তব রূপ দেওয়ার পেছনে প্রধান চালিকাশক্তি। তাঁর পাশে ছিলেন এলাকার
অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি, যারা এই উদ্যোগে অংশ নিয়ে ইতিহাস রচনা করেন।
নেতৃত্ব ও নিষ্ঠার
উত্তরাধিকার
বিদ্যালয়ের প্রথম
প্রধান শিক্ষক মিসেস কলি চক্রবর্তীর সংক্ষিপ্ত দায়িত্বের পর,
নেতৃত্বে আসেন স্বপ্নবান শিক্ষাবিদ এবং স্থানীয় সরকার
পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রয়াত
পারিজাত কুসুম চাকমা। তাঁর দক্ষ পরিচালনা ও শিক্ষার প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা
বিদ্যালয়টির ভিত শক্ত করে। তাঁর হাত ধরেই বিদ্যালয়টি এগিয়ে যায় একটি মানসম্মত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশের পথে।
পরবর্তীতে
ধারাবাহিকভাবে বিদ্যালয় পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন:
• মোঃ ওমর ফারুক (১৯৯৯-২০০০)
• আলী আহমদ (২০০০-২০০৪)
• আনোয়ার হোসেন (২০০৪-২০১০)
• মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (২০১০-২০১২,
ভারপ্রাপ্ত)
• মোহাম্মদ আবদুল কাদের (২০১২-অদ্যাবধি)
তাঁদের প্রতিজনের
নেতৃত্বে বিদ্যালয়টি শুধু বেড়েছে আকারে নয়, উন্নত হয়েছে গুণে ও মর্যাদায়।
প্রতিষ্ঠান নয়,
এক আন্দোলন: নারী
শিক্ষার আলোকযাত্রা
একটি পরিত্যক্ত শেড থেকে
আধুনিক শ্রেণিকক্ষে রূপান্তর-এই যাত্রা ছিল এক সাহসী পদক্ষেপ। শিক্ষার প্রতি অটল
প্রতিশ্রুতি ও জনসম্পৃক্ততার এই দৃষ্টান্ত প্রমাণ করে, সীমিত সম্পদ কখনো স্বপ্নের বাধা হতে পারে না। কাউখালী
বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে ওঠে এলাকার কন্যাশিশুদের জন্য আশার আলো,
স্বপ্ন দেখার সাহস।
অর্জনের মাইলফলক
• ১৯৯৯ সালে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়
হিসেবে স্বীকৃতি।
• ২০০০ সালে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে
এমপিওভুক্তি (স্মারক নং: শা:৪/১জি-১০/৯৯/৬৯-শিক্ষা)।
• ২০০৪ সালে পূর্ণাঙ্গ মাধ্যমিক বিদ্যালয়
হিসেবে স্বীকৃতি।
• ২০২২ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে
এমপিওভুক্তি (স্মারক নং: ৩৭.০০.০০০০.০৭৪.০০২.০০৫.২০২১.১৫৮)।
এসব অর্জন বিদ্যালয়টির
প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা এবং শিক্ষাগত মান নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
সমাজে দায়বদ্ধতার
প্রতিচ্ছবি
শুধু শিক্ষাদান নয়,
সামাজিক সচেতনতার প্রতিও স্কুলটি বিশেষভাবে মনোযোগী। ২০২৩
সালে স্যানিটারি ন্যাপকিন বক্স স্থাপন এবং মাসিককালীন স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মশালা
আয়োজনের মতো উদ্যোগগুলো নারীর স্বাস্থ্য সচেতনতা ও মর্যাদাকে সামনে নিয়ে এসেছে।
এটি প্রমাণ করে, বিদ্যালয়টি একটি প্রগতিশীল চিন্তাধারার প্রতিনিধিত্ব করে।
আজকের কাউখালী
বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
আজ এই প্রতিষ্ঠানটি শুধু
শিক্ষা নয়, নেতৃত্ব, স্বনির্ভরতা ও নারী জাগরণের প্রতীক। প্রতিটি মেয়ে শিক্ষার্থীর চোখে দেখা যায়
আত্মবিশ্বাস, মনে জাগে স্বপ্ন-একটি আলোকিত ভবিষ্যতের। শিক্ষক-অভিভাবক-সমাজ,
সবাই মিলে গড়ে তুলেছেন এই স্বপ্নের ঠিকানা।
পরিশেষে: আলোর পথ ধরে এগিয়ে চলা
কাউখালী বালিকা উচ্চ
বিদ্যালয় আমাদের মনে করিয়ে দেয়-একটি স্বপ্ন, যদি তাতে থাকে নেতৃত্ব, ভালোবাসা ও কমিউনিটির সম্মিলিত চেষ্টার শক্তি,
তবে তা বাস্তবে রূপ পেতে বাধ্য। এই বিদ্যালয়ের
প্রতিষ্ঠাতাগণ, শিক্ষকবৃন্দ এবং সমাজের প্রতিটি অবদানকারী ব্যক্তির প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা।
আমরা বিশ্বাস করি-
"শিক্ষা শুধু
সার্টিফিকেট নয়, এটি মানবিকতা, নেতৃত্ব ও উন্নয়নের বীজ।"
"নারী শিক্ষার আলো
ছড়িয়ে যাক পার্বত্য জনপদে, এগিয়ে যাক জাতি।"